ক্রেগলিস্ট কি?








ক্রেগলিস্ট কি?
এর পদযাত্রা এবং পোস্ট ফ্ল্যাগ না হওয়ার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
বেশ অনেক দিন ধরে অনেকেই ক্রেগলিস্ট নিয়ে কাজ করছেন তবে অনলাইন পিটিসি সাইট বন্ধ হবার পর এই ধান্দার সাথে জড়িত এবং যারা এই প্রতানার চক্রে অনেক টাকা নষ্ট করেছে তাদের বেশির ভাগই এখন ক্রেগলিস্ট নিয়ে কাজ করছেন কাজের সফলতা কতটা তা নিয়ে আমি সন্ধিহান, কেননা ক্রেগলিস্ট নিয়েও এখন প্রতারণা শুরু হয়ে গেছে অনেকই বলে ভাল PVA দিবে, লিড কিনবে, আইপি দিবে বলে অনেক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে । অপরদিকে ভাল টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের লাভ রেখে পিভিয়ে,আইপি কিনে কাজ করার জন্য অন্যদের এই পথে নিয়ে এসে মাঝ পথে ফেলে যাচ্ছে ফলে কাজ করার আগ্রহ নিয়ে অনেক টাকা পয়সা বা কাজ করে টাকা পাচ্ছেনা বা খুব কম পাচ্ছে এমন লোকের সংখ্যা বেড়েই চলছে ।

কেননা তারা জানে না কিভাবে পোস্ট করতে হয় কিভাবে পোস্ট দ্রুত ফ্ল্যাগ বা রিমুভ হয়ে যায় । পিভিয়ে দিয়ে পোস্ট করলেই পোস্ট লাইভ হয় এটা যেমন সত্যি ঠিক তেমনি লাইভ হলেই সফল ভাবে কাজ হল সেটা সত্যি না। কেননা পোস্ট লাইভ করার পর আর একটা বিষয় থাকে তা হল ওই ক্যাটাগরি বা বিভাগে শ্রেণীভুক্ত হওয়া । পোস্ট লাইভ হবার পর ক্যাটাগরি বা বিভাগে শ্রেণীভুক্ত হতে ০-১৫ মিনিট সময় নেয় আর এই সময়ের মধ্যে তারা সেই পোস্ট এর মান যাচাই এবং যদি পোস্ট তাদের নিয়ম নীতি মেনে হয়ে থাকে তাহলে শ্রেণীভুক্ত করে দেয় ।

আর যারা এখন ও কাজ শুরু করেন নি, কিন্তু কাজ করতে আগ্রহী তারা এক পলকে দেখে নিতে পারেন ক্রেগলিস্ট কি এবং কিভাবে শুরু হয়েছিলো।
ক্রেগলিস্ট কি

ক্রেগলিস্ট হল একটি অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রচার নেটওয়ার্ক যা বিশ্বব্যাপী মুক্ত অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রচার মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে যেখানে রয়েছে একাধিক বিভাগ যেমন, জব, সেল, সার্ভিস, হাউজিং মোট কথায় বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে আপনি আপনার অবসর বিনোদনের জন্য একজনকে খুজে নিতে পারেন ।
ক্রেগলিস্টের পদযাত্রা

১৯৯৬ সালে ওয়েব ভিত্তিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পূর্বে ক্রেগ নিউমার্ক ১৯৯৫ সালে সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ার বন্ধুদের ইমেইল ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই কার্যক্রম শুরু করেন এবং এই মেইল গুলকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করেন ।অতি দ্রুতই ব্যবহারকারীর সংখ্যা ও জনপ্রিয়তা বারতে শুরু করলো । নিউমার্ক বিস্মিত হলেন যে কোন প্রকার মডারেশন বা আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সকলে এই মেইলিং লিস্ট কাজে লাগাতে শুরু করলেন ।ঠিক যখন মানুষ দেখল যে এই মেইলিং লিস্ট গুলো তাদের নিজেদের ও তাদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ ফলপ্রসূ হচ্ছে তখন তারা এর উপরকারিতা উপলব্ধি করতে শুরু করলো, আর সেই কথা এবং সুবিধা চিন্তা করে নিউমার্ক শুরু করলেন “জবস” নামক একটি বিভাগ, যেখানে শুধুমাত্র জব বিষয়ক সকল পোস্ট দেয়ার সুবিধা সংযুক্ত করা হল। দিন দিন এর ব্যাপকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আরো বিভিন্ন বিভাগ সংযুক্ত করা হলো। প্রথমিক দিকে প্রযুক্তির কিছুটা সীমাবদ্ধতা ছিল তাই জুন ১৯৯৫ এ Majordomo নামের একটি মেইলিং লিস্ট ম্যানেজার সফটওয়্যার সেখানে সংযুক্ত করা হল।জনপ্রিয়তা ও ব্যবহারকারীর কথা ভেবে নিউমার্ক ১৯৯৬ সালে craiglist.org নিবন্ধিত করলেন এবং ওয়েবসাইট হিসেবে উন্মুক্ত করলেন ।

প্রথম থেকেই নিউমার্ক এর আশা ছিলেন তিনি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, তাই তিনি ১৯৯৮ সালের প্রথম দিকে “হার্ড কোডিং জাভাস্ক্রিপ” হিসাবে ক্যারিয়ার গড়ার। কিন্তু তার মনে প্রানে ক্রেগলিস্ট ছিল সুপ্ত বাসনা হিসাবে। যা পরবর্তীতে তাকে এনে দেয় অসম উচ্চতা।পরে ১৯৯৮ এর শেষের দিকে “লিস্ট ফাউনডেশন” নামে তার কোম্পানি যাত্রা শুরু করলো। কিন্তু ৩ থেক ৪ মাস পর তিনি উপলব্ধি করতে পাড়লেন এই একই নামে একাধিক প্রতিষ্ঠান আছে তাই তিনি ওই নাম ব্যবহার বন্ধ করলেন।

ঠিক ওই সময় সাইটের জনপ্রয়িতা এতটাই বৃদ্ধি পেল যে তিনি তার ক্যারিয়ার ইন্জিনিয়ারিংয়ের কথা ভুলে ফুল টাইম ক্রেগলিস্ট নিয়ে কাজ শুরু করলেন এবং ২০০০ সালের এপ্রিলে তার সান ফ্রান্সিসকো বে অফিসে ৯ জন কর্মচারী নিজুক্ত ও বর্তমান CEO জিম বাকমাষ্টারকে কোম্পানির প্রধান প্রোগ্রামার ও CTO পদে নিযুক্ত করা হয়েছিলো এবং তিনি তখন সাইটে বেশ কিছু নতুন বিভাগ সংযুক্ত করেন এবং ধীরে ধীরে এর প্রসার ঘটতে থাকে পরবর্তীতে তাকে CEO পদে অধিষ্ঠিত করা হয় এবং ওই সালেই সাইট ইউ এস এর ৯ টি শহরে , ২০০১ এ ৪ টি , ২০০২ এ ১ টি এবং ১৪ টি শহরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ।

সৃষ্টি থেকে ২০০৩ এর শেষ পর্যন্ত ক্রেগলিস্ট সম্পূর্ণ ফ্রী সেবা দিয়ে আসছিল পরে ১লা অগাস্ট ২০০৪ এ নিউ ইয়র্ক ও লস এঙ্গেলসে জব পোস্টিঙের জন্য ২৫ ডলার চার্জ করা শুরু হল এবং একইদিনে নতুন বিভাগ হিসেবে “গিগস” সংযুক্ত করা হল এবং সেখানে ফ্রী ও বেশ কিছুতে স্বল্প চার্জে পোস্ট করা যেত। তবুও থেমে থাকলো না এর প্রসার,দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে লাগলো জনপ্রিয়তা এবং বর্তমানে প্রায় ৫০ টির বেশি দেশ জুড়ে এর বিস্তার ঘটেছে ।
বিভিন্ন দেশে বিস্তাতের সাল গুলোঃ

* মার্চ ১৯৯৫ - San Francisco Bay Area
* জুন ২০০০ - Boston
* অগাস্ট ২০০০ - Chicago, Los Angeles, New York, Portland, San Diego, Seattle, Washington, D.C
* অক্টোবর ২০০০ - Sacramento
* নভেম্বর ২০০৪ - Amsterdam, Bangalore, Paris, São Paulo, and Tokyo became the first cities outside primarily English-speaking countries.

সর্বশেষে ৯ ই অগাস্ট,২০১২ তে ৭০ টি দেশের প্রায় ৭০০ শহর সংযুক্ত করা হয় । যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ও। তাই বলা চলে যে অদুর ভবিষ্যৎ তে আমাদের দেশের বিভাগ গুলোর জন্য আমরা আলাদা আলাদা সাইট পাবো।
পোস্ট ফ্ল্যাগ না হওয়ার ৫ গুরুত্বপূর্ণ টিপস

ক্রেগলিস্ট এ পোস্ট করার সময় যে সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয় সেটি হল দ্রুত ফ্ল্যাগ হয়ে যাওয়া। এর কারনে কাঙ্ক্ষিত লিড থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে থাকি, তাই আপনি যত বেশি সময় ধরে আপনার পোস্ট লাইভ রাখতে পারবেন ততোবেশি লিড আসবে,কেননা অনলাইন মার্কেট প্লেস এ অনেক বায়ার ২৪ ঘণ্টা লাইভ না রাখতে পারলে পেমেন্ট দেয় না তবে অনেক সেকশন আছে যেখানে ২৪ ঘণ্টা লাইভ রাখা অনেক কষ্টের হয়ে দাড়ায়।
আসুন দেখি নেই কিভাবে আপনি এই ফ্ল্যাগ থেকে মুক্তি পাবেন।
১. বিরত থাকুন কপি পেস্ট এড থেকে।

কপি পেস্ট এড ক্রেগলিস্টের এড ফ্ল্যাগ হবার সবচেয়ে বড় কারন। আপনি যদি অন্য কারো এড কপি করে নতুন এড পোষ্ট করে তাহলে আপনার ফ্ল্যাগ হবার সম্ভবনা ৯০% । কারন ক্রেগলিস্টের পলিসিতে দেয়া আছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি একই সিটিতে একই পোষ্ট করা হয় তাহলে তা অটোমেটিক ভাবেই ফ্ল্যাগ হয়ে যাবে। সুতরাং নিজে নিজে এড লেখার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে অন্যের এড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট পরিমানে এডিট করে নিয়ে তার পর আবার পোষ্ট করুন।

আর সব চেয়ে ভালো হয় যদি আপনি ইমেজ সহকারে এড পোষ্ট করেন। এতে করে আপনার একই লেখা বার বার পোষ্ট করার কোন ঝামেলা হবে না। মাঝে মাঝে শুধুমাত্র ইমেজ ফাইলের নাম পরিবর্তন করে নতুন কোন হোস্টিং সার্ভারে আপলোড করলেই আপনি ইউনিক লিংক পাবেন। যা দিয়ে আপনি সহজেই পোষ্ট অনেকক্ষণ লাইভ রাখতে পারেন।
২.ব্যবহার করুন সঠিক IP:

ফ্ল্যাগ হবার আর একটি অন্যতম কারন হচ্ছে সঠিক আইপি নির্বাচন না করা। আপনি যদি নিউ ইয়র্ক এর লং আইসল্যান্ড এ পোষ্ট করেন কিন্তু আপনি নেন ক্যালিফোর্নিয়ার অন্য একটি সিটির তাহলে আপনার পোষ্ট হবে ঠিকই কিন্তু লাইভ হবে না। অটোমেটিক ভাবে তা ফ্ল্যাগ হয়ে যাবে। তাই যে সিটিতে পোষ্ট করবেন ঠিক সেই সিটিতেই আইপি নিবেন।
৩. পিভিয়ে বা ফোন নম্বরের ব্যাবহারঃ

অনেকই খুব কম দামে পিভিয়ে বা ফোন ভেরিফাই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন তবে সে ক্ষেত্রে সফলতার হার অনেক কম কেননা তারা জানেন না যে তাদের ফোন নম্বর কোন সিটির তাই এক সিটির পিভিয়ে দিয়ে অন্য সিটিতে পোস্ট করছে এতে খুব দ্রুতই ফ্ল্যাগ হয়ে যায় । পোস্ট লাইভ রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই যে সিটির আইপি নিয়ে কাজ করছেন সেই সিটিতে সেই সিটির ফোন নম্বর ব্যবহার করতে হবে অন্যথায় খুব দ্রুত ফ্ল্যাগ হয়ে যাবে।
৪. দ্রুত পোষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন।

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সময় বাঁচানোর জন্য একসাথে অনেক গুলো পোষ্ট করে। যা মোটেও ঠিক নয়। এতে করে একসাথে সব পোষ্ট ই ফ্ল্যাগ হয়ে যায়। তাই একটি পোষ্ট করার ২-৩ মিনিট পর অন্য পোষ্ট করতে হবে, তা না হলে ক্রেগলিস্ট এর বট আপনাকে স্প্যামার হিসাবে ধরে ফেলবে এবং অটোমেটিক ফ্ল্যাগ করে দিবে।
৫. টাইটলে রাখুন সহজ ও সুন্দর।

অনেকের অভ্যাস আছে যে টাইটেল এ বিভিন্ন সাঙ্কেতিক অক্ষর যেমন !@#$%$&*>:< এসব ব্যবহার করেন। আপনি যদি এসব আপনার পোষ্ট বা টাইটলে এর মধ্যে ব্যবহার করেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ই ফ্ল্যাগ হয়ে যাবে। কারন এসব অক্ষর দেখা মাত্রই এডমিন সেই পোষ্ট কে দ্রুত ফ্ল্যাগ করে দেয়।

তাই আপনি যদি চান আপনার পোষ্টকে অনেকক্ষণ ধরে লাইভ রাখতে এবং বেশি করে রিপ্লে পেতে তাহলে উপরের রুলস এবং টিপস গুলো মেনে চললেই হবে।
লক্ষণীয়ঃ

অনেকেই পিভিয়ে / ইউ এস এর ফোন নম্বর কিনছেন কিন্তু কোন সিটির নম্বর তা জানেন না বা যার কাছ থেক কিনছেন তারা জানাচ্ছেন না এতে এক ফোন নম্বর অন্য সিটিতে ব্যবহার করছেন আর এতে পোস্ট লাইভ হলেও সহজেই ফ্ল্যাগ হয়ে যাচ্ছে তাই অবশ্যই নম্বর কেনার আগে ভাল ভাল কিছু সিটির ফোনে নম্বর কিনবেন এক্ষেত্রে যদি কেনার সময় এভাবে সিটি নেম নির্ধারণ করতে না পারেন তাহলে কেনার পর http://www.areacode.org/ আপনার কেনা ফোন নম্বরের প্রথমের ৩ ডিজিট দিয়ে সার্চ করে জানতে পারেন সেটা কোন সিটির ফোন নম্বর এবং সেই সিটিতে পোস্ট করবেন। এতে করে আপনার পোস্ট লাইভ থাকার সম্ভনা বেশি থাকবে।

আসলে কোন কাজেই আয় করার সহজ কোন পন্থা নেই। আপনাকে পরিশ্রম করতেই হবে। কেউ যদি আপনাকে বলে যে আপনি মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন প্রতিদিন ৩-৫ ঘণ্টা কাজ করে তাহলে আপনি ধরে নিবেন তিনি আপনার সাথে প্রতারণা করছেন। কারন দিন দিন ক্রেগলিস্টে কাজ দুর্গম হয়ে যাচ্ছে। এডমিনরা এখন অনেক সতর্ক ফেক পোস্টিং এ। অতএব যত আপনি নরমাল ভাবে পোস্ট করতে পারবেন তত বেশি আয় করতে পারবেন।

আর সব কিছু ভেবে চিন্তা করে এবং যাচাই বাছাই করে তার পর কাজে নামা উচিৎ। কারন ক্রেগলিস্ট এ কাজ করতে গেলে আপনাকে ইনভেস্ট করতে হবে। তাই এখানে আপনার কিছুটা রিস্ক থেকে যায়। তাই প্রথমে অল্প টাকা নিয়ে শুরু করুন। এর পর বিশ্বস্ত বায়ার পেলে এবং পেমেন্ট বিষয়ে নিশ্চিত হলেই শুরু করে দিন বেশি বেশি ইনভেস্ট আর আয় করুন কাঙ্ক্ষিত অর্থ।

সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment